নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের সুবিধার্থে ২১টি জেলার ২৩টি রুটে ৬০টি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিআরটিসির পর্ষদ গঠন ও কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে। বর্তমান গাড়ির নম্বর অনুসারে মেরামত বাজেট প্রদান করা হয় এবং যথাযথ ভাবে মনিটর করা হয়। পুরোনো গাড়ি নিলামে বিক্রির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
গত এক বছরে দুটি লটে ২৯৪টি বাস নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। ৬০৬টি গাড়ি মেরামত করে বিআরটিসির গাড়ি বহরে সংযুক্ত করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যেক ডিপো/ইউনিটে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে, যা দ্বারা গাড়ি মেরামতের কার্যক্রম চলমান আছে। বর্তমানে কারিগর নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ করে তোলা হয়েছে।
বিআরটিসির গাজীপুর কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসির বহরে সচল বাসের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩৫০টি। আরও নতুন কিছু গাড়ি বিআরটিসির বহরে দ্রুতই যুক্ত হবে। বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পেট্রোল পাম্প গুলো সচল করা হয়েছে। যার ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জ্বালানি খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে।প্রাথমিক ভাবে ছয়টি ডিপোতে বিআরটিসি ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিআরটিসির সব ডিপোতে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন-ব্যবস্থা চালু করা হবে।
ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট অটোমেন সিস্টেমের ফলে বাস ও ট্রাকের আয়-ব্যয়, যন্ত্রাংশ, জ্বালানি সহ সব কার্যক্রম অনলাইন ও অফলাইনে মনিটর করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিআরটিসিতে ইনহাউস প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।বর্তমানে শুদ্ধাচার, এপিএ, তথ্য অধিকার, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি, জিআরএস, ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা, কম্পিউটার অপারেটরদের ওরিয়েন্টেশন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এ-যাবৎ বিভিন্ন বিষয়ে ৪২টি প্রশিক্ষণে ১ হাজার ৪২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসি কর্তৃক নিয়মিত ত্রৈমাসিক সমাচার ও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রধান কার্যালয়সহ প্রতিটি ডিপো/ইউনিটে আইসিটি সেল গঠন করা হয়েছে। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ভর্তি ও ফি অনলাইনে প্রদান করেছে এবং সিমুলেটর সংযোজন করে আধুনিক করা হয়েছে। প্রত্যেক ডিপো/ইউনিটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক প্রধান কার্যালয় থেকে মনিটর করা হচ্ছে।
বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়সহ সব ডিপো/ইউনিটে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১১টি রুটে ই-টিকিটিং ও তিনটি রুটে অনলাইন টিকিটব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয় সহ প্রত্যেক ডিপো/ইউনিটে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। মতিঝিল বাস ডিপোতে একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের কাউন্টার নির্মাণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। বর্তমানে যাত্রী সেবা প্রদানের জন্য ‘আমাদের বিআরটিসি’ নামক একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে জনসাধারণ/সেবা গ্রহণকারী মোবাইল ও ওয়েব ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে বাসের রুট, সঠিক সময় ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। বর্তমান চেয়ারম্যানের যুগোপযোগী ও বহুমুখী সিদ্ধান্তের ফলে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক গতি সঞ্চারিত হয়েছে। বর্তমানে চারটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ২০টি ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে বিআরটিসি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিআরটিসির সব ডিপো/ইউনিটকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে এবং বর্তমানে প্রধান কার্যালয় থেকে ডিপো হালকা মেরামত, ভারী মেরামত ও নিরাপত্তা সহ সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, পরিবহন সেক্টরের মূল চালিকা শক্তি হলো গাড়ি। যদি গাড়ি ঠিক থাকে, গাড়ির পরিচালনা ও অপারেশন যদি ঠিক থাকে, ইনকাম যদি ঠিক ভাবে হয় এর টাকা চুরি না হয়ে ফান্ডে জমা পরে, তবেই প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে বিআরটিসিতে আসার আগে গণমাধ্যমে নিউজ হতো এই খাতে ডোবার আর কিছু বাকি নেই। সেই অবস্থার উত্তোরণ হয়েছে এখন। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে কোনো টাকা না এনে প্রাতিষ্ঠানিক ইনকামের টাকা দিয়ে এখন আমরা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। কিন্তু আমাদের সাফল্যের পরেও কিছু বিশ্বাসঘাতক ও দুষ্কৃতিকারী উন্নয়নের চাকা পেছনে টানছে, সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে তাদেরকে টেনে ধরতে হবে।
Leave a Reply