সায়মন সরওয়ার কায়েমঃ কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁওতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কিশোরী এনে বিভিন্ন দেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে বহু মাদক মামলার আসামী সাকিবের পিতা প্রভাবশালী রোহিঙ্গা ফয়েজের বিরুদ্ধে।
শনিবার ১৫ জানুয়ারী রাতের আঁধারে বর্ণিত ইউনিয়নের মেহেরঘোনা এলাকায় তার শাশুড় বাড়িতে তিন জন রোহিঙ্গা নারী আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার প্রথম স্ত্রী রাবিয়া বেগম। দ্বীর্ঘ দিন ধরে নারী পাচারের ব্যবসা করে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, ফয়েজ মায়ানমারের নাগরিক হয়েও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারী বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পেয়েছেন জাতীয়তা সনদপত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ, ভূমিহীন প্রত্যয়নপত্র, স্কুলের প্রত্যয়ন। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন রোহিঙ্গা ফয়েজ। তার হাতে এখন স্মার্টকার্ড ও বাংলাদেশী পাসপোর্ট !
সে রোহিঙ্গা ফয়েজ টেকনাফ উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিশোরীকে চাকরি দেওয়ার প্রণোভন দেখিয়ে ঈদগাঁওর মেহেরঘোনার পাহাড়ী এলাকায় তার শাশুড় বাড়ীতে নিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী রাবিয়া বেগম। রোহিঙ্গা নারী আনার কথা এলাকায় জানা জানি হলে রাতের আধারে তারা পালিয়ে যায়। ফয়েজ দীর্ঘদিন বছর ধরে পেশার নামে দালাল চক্র হাজার হাজার দরিদ্র নারী বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছে বলে অভিযোগ তার স্ত্রী রাবিয়া বেগমের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সে আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মানব পাচারকারীরা রোহিঙ্গা নারী ও মেয়ে শিশুদের দেশের মধ্যেই রেখে দেয় যৌন কর্মে নিয়োজিত করেন। কখনো কখনো তাদেরকে কলকাতা ও কাঠমান্ডুতে যৌন কর্মী হিসেবে পাচার করে দেয়া হয়। কিছু রোহিঙ্গা মানব পাচারকারী রোহিঙ্গা নারী ও মেয়ে শিশুদের বিয়ে, ভালো চাকরিসহ নানা প্রলোভনে ও আশ্বাসে ক্যাম্পগুলো থেকে তাদের পাচার করে ফয়েজ।
ফয়েজ ব্যক্তি একজন হলেে কিন্তু পরিচিতি অনেক নামে ! কখনো ফয়েজ, অঙ্গন অথবা শুভ আলী নামে নিজেকে পরিচয় দেন তিনি। তাকে এক এক জায়গায় এক এক নামে চেনেন অনেকেই। বিয়ের কথা বলে নারীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে পরে তাদের কৌশলে বিভিন্ন যৌনপল্লিতে পাচারেওে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া মাদকসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তিনি। নির্ধারিত কোনো পেশা নেই তার। ক্ষণে ক্ষণেই অবস্থান পরিবর্তন করেন। বাড়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হলেও বসবাস ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের মেহেরঘোনা রিজার্ভ পাহাড়ি এলাকায়। নারী পাচার, ফিটিং, মাদক বিক্রি ও ছিনতাই-ডাকাতিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকায় বাড়িতেও থাকতে পারেন না ফয়েজ। তাই কখনো কক্সবাজার টেকনাফ, কখনো বা চট্টগ্রামে আবার কখনো ঈদগাঁওতে থাকেন। তার প্রধান কাজ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে নিজের বশে রাখা। এক সময় বিয়ের কথা বলে তাদের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করেন। শুধু তাই নয়, সেই নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে তাদের জিম্মি করতেন। সেসব ভিডিও নানা বয়সের পুরুষদের দেখিয়ে আকৃষ্ট করে বাসায় এনে ‘ফিটিং’ বাণিজ্যও করেন ফয়েজ। আর কোনো পুরুষ তার ফাঁদে পড়ে অনৈতিক কাজের জন্য বাসায় এলে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন মোটা অংকের টাকাসহ মোবাইল ফোন, ঘড়ি ইত্যাদি। যদি ফয়েজ এমন অপকর্মে তার সংশ্লিষ্ট ‘প্রেমিকা’ রাজি না হন, তাহলে তার আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তিনি। তাতেও কাজ না হলে মেয়েদের করা হয় মারধর। শুধু তাই নয়, ফয়েজ এসব মেয়েদের অপকর্ম করতে বাধ্য করতেন। নারীদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ বিভিন্ন অপরাধ সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যেও অপরাধ কর্মকাণ্ড করছেন। রোহিঙ্গা এলাকা হওয়ায় অপরাধীরা সেখানে অবস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। সেখানে যখন-তখন অভিযান চালানো সম্ভব হয় না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে। এ সুযোগে ঘটছে অপরাধ। অধিকাংশ পাহাড়সংলগ্ন হওয়ায় কয়েকটি ডাকাত দলের অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ফলে অপরাধীদের জন্য নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। এসব নাগরিক ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অর্থ লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। অনেকেই অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছে বলে জানা যায়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। রাতে কি ঘটছে তার খবর পাচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন সচেতন নাগরিক।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ফয়েজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন ভাই নিউজ করিয়েন না আমি হাসপাতালে এসেছি আপনার সাথে সকালে দেখা করব।
স্থানীয় এমইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মহসীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফয়েজ একজন রোহিঙ্গা এবং বর্তমানে থাকা তৃতীয় স্ত্রীও রোহিঙ্গা। শাশুড় বাড়িতে নারী আনার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করে নাই, তবে ফয়েজের ছেলে সাকিব মাদক মামলায় জেলে আছে জানি।
Leave a Reply